সোমবার, ২ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

জানি তুমিও ভালবাসো আমায়

দীর্ঘ ৮বছর পরে দেশে ফিরছি একটা অন্যরকম অনুভুতি কাজ করছে। সেই স্কুল লাইফ বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়া করিম চাচার দোকানে বসে চা খাওয়া সত্যিই অসাধারণ ছিল বিকেল হলেই সবাই একসাথে নদীর ধারে বসে গল্প করা সেগুলো কি এখনো আছে নাকি ৮বছরে সব পাল্টে গেছে। বিশেষ করে জমিলা খালার হাতের আচার কি ভোলা যায় কখনো। আপনাদের তো আমার পরিচয় দেওয়া হয়নি। আমি নয়ন এখানকার জমিদারের এক মাত্র নাতি। দাদু মারা যাওয়ার পর আমাদের জমিদারি আর থাকেনা। আমার দাদুর দুইটা ছেলে আমার বাবা বড়ো আর ছোট কাকু ১০বছর আগে মারা গেছে। সেখান থেকে কাকিমা আমাদের সাথে থাকে উনার কনো ছেলে মেয়ে নেই। আমাদের জমিদারি না থাকলেও আমার বাবাকে সবাই জমিদারবাবু বলে ডাকে আমার বাবাও বিপদে আপদে সবার পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। পড়াশোনা বাদ দিয়ে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দেওয়ার জন্য আমাকে জোর করে বিদেশে পাঠানো হয়। আজকে আমি দেশে ফিরছি কাওকে কিছু জানাইনি ভাবছি সবাইকে চমকে দেবো। এয়ার পোর্ট থেকে একটা ট্যাক্সিতে করে বাসার সামনে এসে নামলাম। তারপর আসতে করে গেটের ভিতর ঢুকলাম গেট থেকে বাড়ি পর্যন্ত সলিং করা সলিং এর দুই পাশ দিয়ে ফুলের গাছ লাগানো। আর এক পাশে বড়ো এক পুকুর অন্য পাশ দিয়ে ফুলের বাগান করা। এখন অবশ্য খুব বেশি ফুল গাছ নেই সেখানে। বাড়িটা সেই আগের মতোই আছে মস্ত বড়ো এক বিল্ডিং জমিদার বাড়ি বলে কথা। বাড়ির পেছোন দিকে একটা বিশাল বাগাল সেখানে নানা রকম ফলের গাছ আছে। বকবক করতে করতে বাড়ির ভিতরে ঢুকে পড়লাম হাবু ভাই আমাকে দেখি চেচিয়ে উঠলো। ওর চ্যাচানিতে মরা মানুষ জেগে উঠতে পারে সবাই এক সাথে বাইরে আসলো আমাকে দেখেতো সবাই অবাক। যে যার মতো শুরু করছে আমাদের নয়নটা কতো বড়ো হয়ে গেছে। আমাদের কথা একদম ভুলে গেছে,,আম্মা এসেই আমাকে জড়িয়ে ধরছে বিদেশে গিয়ে শরীলের অবস্থা একি করছিস তুই কতো কাবু হয়ে গেছিস। খাওয়া দাওয়া ঠিক মতো করতিস না। আরও কতো কথা আমি যে এতদুর থেকে আসলাম কোথায় কিছু খেতে দেবে সেদিকে কারো খেয়াল নেই। আমাকে এতদিন পরে দেখে সব কিছু ভুলে গেছে। এদের এই extra kearing আমার একদম ভালো লাগে না। এমন সময় কাকিমা চলে আসলো জাক বাচলাম এই কাকিমাই এক মাত্র আমর মনের কথাটা বোঝে। কাকিমাঃ- ছেলেটা এতোটা পথ যার্নি করে আসলো কোথায় ওকে একটু খেতে দেবে তানা টানাটানি শুরু করছে। নয়ন বাবা যাও ফ্রেশ হয়ে আসো আমি তোমাকে খেতে দিচ্ছি। হাবু ভাই আমার ব্যাগটা নিয়ে আমাকে আমার রুমে নিয়ে গেলো। আমিঃ- হাবু ভাই এটা আমি কোথায় এলাম। হাবু ভাইঃ- সেকি ভুলে গেছেন এটাতো আপনের ঘর। আপনি বিদেশে যাওয়ার আগে এখানেই তো থাকতেন। আমিঃ- সেটাই তো বলছি আমি যেভাবে রেখে গিছিলাম সেভাবেই আছে। এই ৮বছরে কনো পরিবর্তন হয়নি। হাবু ভাইঃ- হ্যা ভাইজান আপনে যাওনের পর এই রুমে কাওকে আসতে দিতোনা। আর নীলা আপু মনি যখন আসতো তখন শুধু সেই এই রুমে আসতো এসে পরিস্কার করে আবার তালা মেরে রাখতো আর চাবিটা আমার কাছে দিয়া কইতো কাওকে দিবানা। এখানে নাকি ক্যামেরা লাগানো আছে কেউ কিছুতে হাত দিলে উনি দেখতে পায়। আমিঃ- তাই নীলা বলছে এসব। তাহলে ওর এখনো আমার কথা মনে আছে। হাবু ভাইঃ- কি কন ভাইজান হেইতো সারাদিন আপনের কথা বলে। এখানে আসলে ওই পুকুর পাড়ে বসে থাকে। আমিঃ- তাই ও অনেক বড়ো হয়ে গেছে না,,,এখনো সেই আগের মতো সুন্দরী আছে। হাবু ভাইঃ- হ্যা অনেক বড়ো হয়ে গেছে কিন্তু ওর ছেলে মানুষি এখনো যায়নি আর এখন আগের চেয়ে অনেক সুন্দর হয়েছে। আমি অহন যাই ভাইজান বড়ো বাবু ডাকতাছে। এতক্ষণ নীলার কথা বলছিলাম নীলা আমার কাকিমার ভাইয়ের মেয়ে নীলার দাদু আমার দাদুর বন্ধু ছিল। তাই বন্ধুত্বটা গাড়ো করতে আমার কাকুর সাথে উনার মেয়ের বিয়ে দেন। কিন্তু বিয়ের ১বছর পরে আমার কাকু একটা এক্সিডেন্টে মারা যায়। কাকিমাকে আবার বিয়ে দিতে চেয়েছিলেন কিন্তু উনি করেননি। নীলা খুব সুন্দর দেখতে ওর একটা ছোট্ট বোন আছে আমি অবশ্য দেখিনি কারণ ওর বয়স ৭বছর। ওনাকি নীলার চেয়ে বেসি মিষ্টি দেখতে। নীলা আর আমি খুব ভালো বন্ধু ছিলাম ঠিক বন্ধু না আমি ওকে ভালবাসতাম নীলাও হয়তো আমাকে ভালবাসতো কেও কাওকে কখনো বলতে পারিনি। আসলে আমরা তখন অনেক ছোট ছিলাম তাই সাহস করে বলতে পারিনি। বিদেশে গিয়ে নীলাকে সব সময় miss করতাম কয়েক বার চিঠি লিখছি কিন্তু কখনো দেওয়া হয়নি। বাসায় যখন কথা বলতাম ইচ্ছে হতো ওর সাথে একটু কথা বলতে কিন্তু আবার ভাবতাম আমি কেনো ওর সাথে কথা বলবো ওতো কখনো আমার কথা ভাবেনা আমার সাথে কথা বলতে চায়না। আমি ভাবছিলাম ও অনেক বড়ো হয়ে গেছে এখন কলেজে পড়ে ওর কতো বন্ধু আছে আমার কথা কি আর মনে আছে। কিন্তু হাবু ভাইযে বললো ও সারাক্ষণ আমার কথা ভাবে আমার ঘরে কাওকে ঢুকতে দেয়না। আমাদের সেই পুকুর পাড়ে বসে থাকে আসলে ও যখন আমাদের বাড়ি আসতো আমরা ওই পুকুর পাড়ে বসে থাকতাম। আবার আমিও ওদের বাসার যেতাম আমি না খেলে নীলাও না খেয়ে থাকতো। শীতের সকালে ধান খেতের পাশ দিয়ে হাটতাম ও পড়ে যাবে বলে আমি ওর হাতটা শক্ত করে ধরে রাখতাম। মাঝরাতে চাঁদ দেখার জন্য ওকে নিয়ে ছাদে যেতাম ও মাঝে মাঝে আমার কাধের উপর মাথা রেখে ঘুমিয়ে পড়তো। ঘুমন্ত অবস্থায় নীলাকে পরীর মতো লাগতো,, নীলার কি এসব মনে আছে হয়তো আছে আবার না। অনেক খুদা লাগছে খেয়ে আসি,, তার আগে বাবার সাথে একটু দেখা করে আসি। বাবার রুমে যেতেই বাবা বলছে এখনো বাবার ওপর রেগে আছো সেই কখন আসলে আর এখন মনে পড়লো আমার কথা। আমিঃ- সেকি বাবা তুমি যদি আমাকে জোর করে বিদেশে না পাঠাতে তাহলে পড়াশোনাটা শেষ হতোনা তুমি যেটা করছো সেটা আমার ভালোর জন্য করছো। তারপর বাবার সাথে কিছুক্ষণ কথা বলার পর। বাবাঃ- যাও কাকিমা ডাকছে খেয়ে নাও পরে কথা হবে। আমিঃ- ওয়াও সব আমার ফেভারিট তুমি যানো বিদেশে কতো খাবার খেয়েছি কিন্তু তোমার এই রান্নাটা কথাও পাইনি। কাকিমাঃ- তাই,, আসার আগে আমাকে অন্তত বলতে পারতি। তাহলে আমি আরও কিছু রান্না করে রাখতাম। আমিঃ- বললে কি সবাইকে চমকে দিতে পারতাম। কাকিমাঃ- তুই জানিস আমরা তোকে কতো মিস করতাম। আমিঃ- আমিও অনেক মিস করতাম,,কাকিমা নীলা কেমন আছে। কাকিমাঃ- মনে আছে আমার ভাইযির কথা। আমিঃ- মনে থাকবে না কেনো ওকে কি ভুলতে পারি। ও আসেনা আমাদের বাড়ি। কাকিমাঃ- আসে কিন্তু আগের মতো ওতো আসেনা। আমিঃ- পোরশুতো ওর জন্মদিন না। কাকিমাঃ- হুমম জানিস তুই যাওয়ার পর থেকে ওর জন্মদিনে কনো অনুস্ঠান করতে দেয়না। আমরা ওর কাছে অনেক বার সুনছি ওবলে এখন ভাল লাগেনা। আমি জানতাম ভালোনা লাগার কারণটা তুই ছিলি। আমিঃ- আমি আসছি সেটাকি ও জানে। কাকিমাঃ- ওর আম্মুকে বলছি ও বাসায় ছিলোনা হয়তো জানে না। আমিঃ- তাহলে তুমি আবার ফোন করো করে বলো নীলাকে যেনো কেউ আমার আসার কথা কিছুনা বলে। কাকিমাঃ- কেনো?? আমিঃ- আমি যা বলছি তাই করো বাকিটা তোমাকে পরে বলবো। কাকিমাঃ- আচ্ছা তুই খেয়েনে আমি বলছি। ****সাড়া পেলে Next দিবো.....

কোন মন্তব্য নেই: