বুধবার, ২৮ আগস্ট, ২০১৯

বেলাশেষে

#বেলাশেষে♥ (২য়-পর্ব) আমি তাসনি নয়, বলার পর আমি চমকে উঠে ফিরে তাকালাম। এক ঝটকায় হাতটা সরিয়ে নিয়ে দেখলাম খুব সাধারণ পোশাক পরা এক মেয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ওর চেহারার দিকে না তাকিয়েই বললাম, --কে আপনি? আমার হাত ধরার সাহস কীভাবে হল? যেহেতু আমি মেয়েটির দিকে একবারের জন্যও তাকাইনি তাই ওকে চেনার কথা নয়৷ তাছাড়া সে বউয়ের পোশাকে ছিল না। : আমি মেইরি। যার সাথে কবুল পড়লেন তাকে চিনতে পারছেন না। দুঃখিত হাত ধরার জন্য। আপনি এতই অন্যমনস্ক ছিলেন, বেশ কয়েকবার ডাকার পরও আপনার কোন সাড়া পেলাম না তাই হাত ধরেছি। -- বাহ! এর মধ্যে কাপড়ও চেইঞ্জ করে ফেলেছেন? কী অদ্ভুদ! আপনার সাথে কথা বলতেই হবে কি? যে আপনার ডাকে সাড়া না দিলে হাত ধরে টানবেন? : জ্বী না, এই কাপড়েই আমার বিয়ে হয়েছে। আর আপনার মনযোগ,,, কথা শেষ করতে না দিয়ে বললাম, -- হাউ ফানি, ফাজলামি করার জায়গা পান না। : আপনার সাথে কি আমার ফাজলামোর সম্পর্ক? ফাজলামো করবো। --সে সম্পর্ক কখনোই গড়ে উঠবে না। সেই কল্পনাও করবেন না। : সেটা ভবিষ্যতের জন্য না হয় ছেড়ে দিন। -- সে যাই হউক এখানে কেন এসেছেন? শুনুন আপনাকে একটা কথা স্পষ্ট করে বলে দিই, আপনি কখনোই আমার তাসনির জায়গা নিতে পারবেন না। সো,,, আমার কথা শেষ করতে না দিয়েই সে বললো, : আমি নিতে চাইও না। আর হ্যা, এখানে মা আমাকে পাঠিয়েছেন। মা না পাঠালেও আমি আসতাম। আপনি না চাইলে আমি কখনো আপনার বেডে ঘুমাব না। আমি ভিভানে ঘুমাব। আপনি নিশ্চিত থাকতে পারবেন, আপনার তাসনির জায়গা কেউ দখল কর‍তে চাইবে না। -- চাইলেও কখনো পারবে না। : আচ্ছা বাদ দিন তো, চলুন নীচে চলুন। আর কতক্ষণ এভাবে এখানে দাঁড়িয়ে থাকবেন? চারটা বাজে। -- যতক্ষণ খুশি দাঁড়িয়ে থাকব সেটা আমার ইচ্ছা। আপনি কেন জেগে আছেন? : বা রে, স্বামী বাইরে কষ্ট পাচ্ছে আর স্ত্রী কীভাবে নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারে। --খবরদার নিজেকে আমার স্ত্রী বলবেন না। মুসার স্ত্রী শুধু একজন, তাসনি। : আমার বলা আর না বলাতে কিছু এসে যায় না। এই সমাজ আমাকে মুসার স্ত্রী হিসেবেই জানবে। আচ্ছা আপনি না চাইলে কখনো নিজেকে আপনার স্ত্রী হিসেবে দাবী করব না। এবার তো অন্তত নীচে চলুন। -- আমার চিন্তা আপনার না করলেও চলবে। : না, চলবে না। কেন চলবে না সেটা এখন বলব না। তাছাড়া ফজরের আজানের সময় হয়ে এলো, নামাজ পড়ে কিছুক্ষণ ঘুমিয়ে নিন। -- আ্হা, বললাম তো। আমার চিন্তা না করতে। যান তো যান। মেয়েটি কিছুক্ষণ চুপচাপ দাঁড়িয়ে থেকে চলে গেল। আজান হওয়ার পর আমিও নিচে এসে অজু করে মসজিদে চলে গেলাম। মসজিদ থেকে এসে দেখি, মেয়েটি গভীর ঘুমে আচ্ছন্ন। অনেকটা না চাইতেই মুখ থেকে তিরস্কারের সুরে বেরিয়ে এল, --আমাকে নামাজের কথা বলে? আর নিজে ফজরের আজান শুনার পরও নামাজ না পড়ে ঘুমিয়ে গেল। মেয়েটি জেগেই ছিল, বললো, : অযথা কু ধারণা করবেন না। আমি নামাজ পড়ে, সুরা ইয়াসিন পড়েই শুয়েছি।। আল্লাহ বলেন, হে ঈমানদারগণ! তোমরা বহুবিধ ধারণা হতে দূরে থাক; কারণ কোন কোন ধারণা পাপ। (সূরা হুজুরাত ১২ আয়াত) রাসুল (স:) বলেছেন, ‘‘তোমরা কু-ধারণা থেকে নিজেদেরকে বাঁচিয়ে রাখ। কারণ কু-ধারণা সবচেয়ে বড় মিথ্যা কথা।’’ (বুখারী ও মুসলিম) -- হাদীস শুনাতে আসবেন না। আপনি বোধহয় আমার সম্পর্কে জানেন না। আর আপনি কয়টা হাদিস মানেন? : প্রথমত আমি হাদীস শুনাচ্ছি না। নিজের পক্ষে সাফাই দিচ্ছি। কারণ আপনি ভেবেছেন আমি নামাজ না পড়েই শুয়ে পড়েছি। দ্বিতীয়ত হ্যা, আমি আপনার সম্পর্কে জানি না কিন্তু জানতে চাই এবং খুব আগ্রহ নিয়েই। আপনি তো জানতেই দিচ্ছেন না। আর হ্যা, যতটুকু জানি মানার চেষ্টা করি। পরিপূর্ণ জানার সুযোগই পাইনি। যতটুকু পেয়েছি আলহামদুলিল্লাহ। আর যা জানি না তা আপনি শিখিয়ে দিবেন। -- শুনুন আমি আপনাকে আগেও বলেছি আমার সাথে রিলেশন বানানোর চেষ্টা করবেন না। : শুনুন আমি আপনাকে আগেও বলেছি, আমি আপনার সাথে রিলেশন বানানোর চেষ্টা করি আর নাই বা করি আপনার সাথে আমার সম্পর্ক তৈরি হয়েছে অলরেডি। -- কী তাজ্জব মেয়ে বিয়ের রাতেই স্বামীর সাথে মুখেমুখে তর্ক করে? এই রেকর্ড বোধহয় দুনিয়াতে বিরল। মেয়েটি সরল হাসি দিয়ে বললো, : স্বামী তো হতেই চাইছেন না। সো তর্ক করলেও কি আর না করলেও কি। আর হ্যা, কারো বিয়ের রাত এমন হয় না! তাই বিয়ের রাত না বললেও চলবে। আমার কাছে কথার কোন জবাব ছিল না। তাই একটু উঁচু আওয়াজেই বললাম, -- যা ইচ্ছা তাই করুন। আমাকে ঘুমুতে দিন। মুহুর্তেই ঘুমের রাজ্যে নিজেকে চালান করে দিলাম। ঠিক সাড়ে বারটায় আমার ঘুম ভাঙলো। ঘুম থেকে উঠে দেখি। মা, মেইরি, আয়শা লিভিং রুমে খুব হাসাহাসি করছে। দেখে খুবই ভাল লাগছে। অনেকদিন ওদের এভাবে হাসতে দেখিনি। মা, আয়শা সারাদিন বাসায় একা থাকে ওরা খুব কম সময়ই এভাবে মন খোলে হাসে। কিছুক্ষণ তাকিয়ে দেখে গলার আওয়াজ বাড়িয়ে বললাম, -- মা আমাকে এতক্ষণ ডাকনি কেন? আমার অফিস,, মা কথা শেষ করতে না দিয়েই বলল, : বিয়ে উপলক্ষ্যে তোর দুই সপ্তাহের ছুটি। আমিই ছুটি নিয়েছি। -- মা তুমি কী যে কর না! আর হ্যা আয়শাকে কাল থেকে রাতে আমার সাথেই দিও। : একদম দরকার নেই। আয়শাকে ছাড়া আমার ঘুম আসে না। -- ঠিক আছে তোমার যাই ইচ্ছা কর। বলে রাগ করে রুমে চলে আসলাম। মা বলে উঠলো, : আরে, নাস্তা খেয়ে যা, আজকের নাস্তা মেইরি বানিয়েছে। পিছনে ফিরে আবার বললাম, -- আমি কারো হাতের খাবার খেতে পারি না তুমি সেটা জান না। আমি শুধু তোমার হাতের খাবারই খাব। বলে রুমে চলে আসলাম। রুমে এসে বারান্দায় দাঁড়িয়ে মানি প্ল্যান্ট গুলো দেখছিলাম আর পরিচর্যা করছিলাম। আগে এগুলো তাসনিই করতো৷ আমার এসবের সখ নেই। তাসনিই এসব পছন্দ করতো। কত বকেছি বারান্দা থেকে এসব ঘাস সরিয়ে ফেলতে। মেয়েটি মুচকি হেসে বলতো ঃ এগোলোই মানুষের সবচেয়ে বড় বন্ধু। এরা সমস্ত দুঃখ নিতে জানে। কাউকে কষ্ট দিতে জানে না। হুম ঠিক তাই, তাসনি যাওয়ার পর আমার বাসায় মন টেকানোর কিছু উপকরণের মধ্যে এই গাছগুলোও আছে। বাসায় আসলে ঘণ্টার পর ঘণ্টা এই গাছগুলোর সাথেই কাটিয়ে দিই। এখানে বসলে মনে হয় প্রাকৃতি কত সুন্দর। বুক ভরে নির্মল নিশ্বাস নিতে পারি। আর প্রাণ ভরে আমার তাসনির গায়ের গন্ধ নিতে পারি। কিছুক্ষণ পর মেইরি এসে বারান্দার চেয়ারে বসলো, বললো, : চলুন ভেতরে নাস্তা করবেন। -- আপনাকে আমার বিষয়ে চিন্তিত হতে হবে না। আগে আপনি ছিলেন না আমার দিন সুন্দর ভাবেই কেটে যাচ্ছিল, ইন শা আল্লাহ ভবিষ্যতেও কাউকে দরকার হবে না। : বাপরে বাপ, আপনি প্রচুর কথা শুনাতে পারেন। সামান্য নাস্তা খেতে ডাকলাম সেখানে আপনি আমাকে অতিত বর্তমান নিয়ে কত লেকচার দিয়ে দিলেন। যাচ্ছি বাবা যাচ্ছি। আমি একটু নিশ্চুত হলাম। ওমা আমার শান্তি বোধহয় মেইরি নামক মেয়েটা সহ্য করতে পারে না। কিছুক্ষণ পর দু কাপ চা নিয়ে আবার হাজির, হাতে বই, ডাঃ সামসুল আরেফিন শক্তির 'মানসাঙ্ক' নামক বইটি। বইটি আমি পড়েছি, আমার সেল্ফ থেকেই নিয়েছে। বইটিতে লেখক টিজিং এবং ধর্ষণ, ও এ বিষয়ের বিভিন্ন ক্রাইম গুলোর উৎপত্তি ও প্রতিকার তুলে ধরেছেন বেশ দক্ষ হাতে। পর্দা, বেপর্দা, বয়ষ্ক, বয়ষ্কা, পশু,ইভেন শিশু রাও ধর্ষণ হচ্ছে প্রতিনিয়ত! তাহলে বাঁচার উপায় কি? সমাজে প্রচলিত, মেয়েদের পোশাক আর ছেলেদের মেন্টালিটির বাইরে গিয়ে লেখক ধর্ষণের পিছনের কারণ হিসেবে ভিন্ন তিনটি কারণ নিয়ে আলোচনা করেছেন। ১. মেন্টাল সেটআপ, ২. পরিবেশ, ৩. স্টিমুলাস বা উদ্দীপক। দেশের বর্তমান পরিস্থিতিতে বইটা আমার বেশ ভাল লাগে। আমারও একটি মেয়ে আছে। আমার কলিজা। যাক সেসব কথা কিন্তু মেয়েটি হঠাৎ বইটি পড়ছে কেন? বললাম, -- নিজেকে কী ভাবেন? বিশ্ব সুন্দরী কেউ? ঐশ্বরিয়া?!! : না আমি তো তেমন মনে করি না। -- তো কী ভাবেন? বইটি নিয়ে আমি যেখানে এসেছি সেখানে আসছেন কেন? : আমি নিজেকে ওই যে কি নাম বললেন, এর চেয়েও বেশি সুন্দরী ভাবি। একটা মানুষ যতক্ষণ আল্লাহর কাছে দামী হবে না, সে সত্যিকার অর্থে কখনোই দামী নয়। আমি কেমন তা আমার আল্লাহই ভাল জানেন। আর আমি জানি আপনি চাইলেও,,,, এসব করতে পারবেন না। ওহ হ্যা, এখানে কেন এসেছি, মা বলেছে আমি যেখানে খুশি যেতে পারবো, যাই ইচ্ছা করতে পারব। এটা আমার সংসার, আমার ঘর এবং স্বামীও আমার। সেই হিসেবে আমি যা খুশি করতে পারবো। খুব রাগ হচ্ছিল, নিজেকে সামলে নিয়ে নিজের কাজে মনযোগ দিলাম আর মনে মনে ভাবলাম, তাকে আমি পরিপূর্ণ ইগনোর করবো।

কোন মন্তব্য নেই: