রবিবার, ১ সেপ্টেম্বর, ২০১৯

আমি শুধুই তোমাকে চেয়েছি

আমি তানু,পুরো নাম তামান্না রাহাত তানু,সবাই তানু বলেই ডাকে,এইবার এইচ এস সি দিলাম।এক্সামের পেরা শেষ করেই ভাবলাম কোথাও গিয়ে ঘুরে আসি,যেই ভাবা সেই কাজ। এরই মাঝে দেখলাম আম্মু খালামনির সাথে কথা বলছে,আম্মুর কথা বলা শেষ হলে খালামনির সাথে আমি কথা বললাম, খালামনি বললো এক্সাম শেষ এবার কিছুদিনের জন্য আমাদের ওখানে চলে আয়,আমিও এটাই ভাবছিলাম তাই আর না করলাম। খালামনি ঢাকাতে থাকে,আর আমরা সিলেটে,দুরত্ব থাকার কারনে তেমন যাওয়া আসা হয় না।আর একেই তো পড়ার চাপ তাই আর তেমন খালামনির সাথে দেখা হয় না। ব্যাগ ঘুচানো শেষ এবার বাসা থেকে বেরোবো।অনেক্ষন জার্নি করার পর ঢাকায় পৌছালাম,এখন কোন দিকে যাবো সেটাই ভাবছি,খালামনি বললো ওনার আল্লাদে আটখানা বজ্জাত ছেলেটাকে পাঠাবে,কিন্তু কই এখানে তো কাউকেই দেখছি না।দূর এখন কি করে যাই,এখানকার কিছু তো তেমন চিনিনা,খালামনি নাম্বারে কল দিলাম,খালামনি বললো ফাজিলটারে পাঠাইছে,কিন্তু কোথায় সেই হাবলা হাদারাম,বান্দর বিলাই এখানে কাউকেই দেখতে পাচ্ছি না,আল্লাহ কি করবো এখন আমি। কল দিলাম খালামনি কে,ওনি বাসার সব ডিটেলইস ফোনে বুঝিয়ে দিলেন,আমি যথারীতি সব তথ্য ফলো করে অবশেষ এ খালামনির বাসায় গেলাম,খালামনি কে জিজ্ঞেস করলাম কেমন আছেন,উল্টো ওনি আমায় জিজ্ঞেস করলেন আমি ঠিক আছি কি না,আমি বললাম আমি ঠিকঠাক ভাবেই এসেছি কোনো অসুবিধা হয়নি,কিন্তু খালামনি তোমার ফাজিল ছেলেটাতো আমায় আনতে গেলোনা। খালামনি বললো আমাকে আনতে যাওয়ার কথা বজ্জাতটা ভুলেই গেছে,তাই এখন ওনি ওনার বান্দর ফ্রেন্ড দের সাথে মনের সুখে আড্ডা দিতেছে,বাসায় এখনো আসেনি। দাড়াও বেটা আজ তোমার মজা দেখাবো আমাকে আনতে না গিয়ে ওনি মনের সুখে আড্ডা দিবেন আর আমি সেটা চুপচাপ মেনে নিবো কখনো না,অসম্ভবমাজ ওর একদিন কি আমার একদিন। ফ্রেশ হয়ে খালামনির কাছে গেলাম দেখি খালামনি রান্না করছে আমায় বললো আমি কিছু খাবো কি না।আমি কিছু খাবো না বলে সোফায় বসে টিভি টা অন করে দেখতে মটু পাতলু দেখতে লাগলাম,এরই মাঝে কলিং বেল বেঝে উঠলো।খালামনি আসতে চাইছিল আমি আসতে না দিয়ে নিজে গেয়ে দরজা খুললাম। আপনি কে, কি চাই এখানে, এই যে মিস আপনি কে, আর আমার বাসায় আপনি কি করছেন। কি বলছেন আবোল তাবোল এটা আপনার বাসা মানে,এটা আমার খালামনির বাসা,আপনার আমার খালামনির সাথে কি দরকার।(আরেহ বুঝলেন আমি ইচ্ছে করেই ওর সাথে এমন করে কথা বলতেছি, আসলে ওই হলো খালামনির বজ্জাত ছেলে।দাড়াও দেখাচ্ছি) এই শুনুন কে আপনার খালামনি,আর এটা আমার বাসা সরুন তো ভেতোরে যাবো। দাড়ান এক পা ও আগাবেন না,আপনার বাসা বললেই হলো, এটা যে আপনার বাসা আগে তার প্রমাণ দিন,নাহলে ভেতরে যাওয়া বারন। আরেহ আচ্ছা ফাজিল মেয়েতো আপনি,আমার বাসায় আমি আসবো তাতে আবার কিসের প্রমান হুম,আর আমি আপনাকে প্রমান দিতে বাধ্য নই। কি, Just wait and see বলেই খালামনি কে ডাকলাম। খালামনি খালামনি এদিকে আসোতো একবার,একটা বজ্জাত বেয়াদব ছেলে এসেছে এটা নাকি ওর বাসা।প্লিজ একটু আসো না গো। কি রে আম্মু কি হয়েছে কে এসেছে রে কার সাথে তুই এতক্ষন ধরে ঝগড়া করছিস। খালামনি এই ছেলে বলছে এটা নাকি ওর বাসা কথাটাকি সত্যি,বলেই খালামনি কে একটা চোখ মারলাম।খালামনি হয়তো আমার কথা বুঝতে পেড়েছে তাই মুখ টিপে টিপে হাসছে। এই ছেলে এই এটা আশরাফ মাহমুদ এর বাসা এখানে আসতে হলে টাইম মেনে আসতে হবে।(আশরাফ মাহমুদ হলেন খালামনি বর) আম্মু তুমি কি বলছো এই শাঁকচুন্নির কথায় তুমি তোমার নিজের ছেলেকে বাইরে দাড় করিয়ে রাখছো। কি আমি শাঁকচুন্নি, খালামনি আজ ওর খাওয়া বন্ধ, ও বাইরে দাঁড়িয়ে থাকুক, যেই না দরজা বন্ধ করতে গেলাম অমনি ফাজিলটা জোড় করে ভেতরে চলে এলো। আমি শাঁকচুন্নি বলেই ওরে সারাঘর দৌড়াতে লাগলাম,ও আগে আগে আর আমি পিছু পিছু দৌড়াচ্ছি।অনেক চেষ্টার পরও অকে ধরতে পারলাম না। পালিয়ে যাবে কোথায়,তোমাকে তো আমি দেখেই ছাড়বো। অনেক হয়েছে যাও দুজনই এবার খেতে বসো।অনিক তুই গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আয়।খেতে বসেছি তাও ওর জন্য শান্তি নাই,বাঁদরামো করে যাচ্ছে,পুরো সময়টা ও আমাকে জালিয়ে মারছে,শয়তান, বিলাই, বান্দর, বুঝাবো মজা তকে আমার সাথে বাঁদরামি। তারপর খাওয়া দাওয়া শেষ করে একটু রেস্ট নিলাম,বিকেলে গিটারের টুংটাং আওয়াজে ঘুম ভাংলো। খালামনি মনে হয় আংকেলের সাথে কথা বলছে আসলে আংকেল দেশের বাইরে তাকে, ইউ কে নিজেদের ব্যবসা আছে তাই দেশে কম আশে বছরে দুএকবার আসেন। আমি নিজেই ছাদের দিকে গেলাম,কেউ একজন খুব সুন্দর করে গান গাইছে,এতো মিষ্টি গলায় কে গান গাইছে।ছাদে গিয়ে তো আমি পুরাই অবাক,অনিক গান গাইছে,এতো মিষ্টি সুরে গান গাইছে আমি আর বিরক্ত করলাম না চুপচাপ ওর গানটা শুনছি।। আমি পাশে আছি অনিক সেটা টের পেয়ে নিজেকে আড়াল করতে চায়,কিন্তু ও নিজেকে লুকাচ্ছে কেনো? আমি স্পষ্ট দেখতে পেলাম অনিক ওর কান্না লুকাবার বৃথা চেষ্টা করছে,ওর গানের গলা টা খুব সুন্দর তবে তার মধ্যে একাকিত্ব আর চাপা কষ্টের আবাশ পেলাম,ও কি তাহলে কান্না লুকাতে চাইছে,কিন্তু অনিক কাঁদছে কেনো,কি আছে ওর এই কান্নার পেছনে,আমাকে জানতেই হবে কি সেই কারন যার জন্য ও এভাবে কাঁদছে। আমি কিছু বলতে যাবো, তখনি অনিক পাশ ফিরে চলে গেলো, আমাকে কিছু বলার সুযোগ ও দিলো না।তুমি যতোই আড়াল করো অনিক আমি জানবই তোমার কান্নার পেছোনের রহস্য,জানতে আমাকে হবেই সেটা যে ভাবেই হোক। কোথায় গেলো অনিক,রুমতো ফাঁকা,বাইরে গেলো নাকি।খালামনি খালামনি বলে ডাকলাম।তখনই খালামনি এসে বলে,কিরে আম্মু ডাকছিস কেনো কিছু দরকার, না খালামনি কিছু দরকার না, খালামনি অনিক কোথায় গো,রুমে তো দেখতে পেলাম না,এক্ষুনি ছাদে ছিলো কিন্তু আমাকে কিছু আড়াল করে পালিয়ে গেলো মনে হলো। খালামনি আমার কথা শুনে কি রকম একটা গম্ভীর ভাব ভাব এনে বলে কই কিছু নাতো। খালামনি আমার থেকে কিছু লুকিয়ো না ছুটো বেলার অনিক আর এই অনিকের মধ্যে অনেক পার্থক্য,আমি কিছুতেই এই অনিকের মাঝে আগের অনিক কে খোঁজে পাচ্ছি না।কি হলো খালামনি কি হয়েছে ওর কিছু তো বলো প্লিজ চুপ করে থেকো না। জানিস আম্মু আজ অনিক যখন তোর সাথে দুষ্টামি করে কথা বলছিলো তখন এক মূহুর্তের জন্য মনে হয়ে ছিলো আমি আমার আগের অনিক কে ফিরে পেয়েছি।তো সাথে দুষ্টামি গুলোর মাঝে আমি সেই অনিক কে খোঁজে পেয়েছি যা সে বরাবরের মতো ছিলো,কিন্তু! কিন্তু কি খালামনি থামলে কেনো বলোনা। বলবো তার আগে তুই আমায় একটা কথা দে। কি কথা খালামনি তুমি শুধু একবার বলো। তুই আমার অনিক কে আবার আগের অনিকের মতো করে দে যে অনিক সাড়াদিন শুধু দুষ্টামি, হাসি আড্ডা নিয়ে মেতে থাকতো। খালামনির কথায় আমি পুরোই থ হয়ে বসে আছি,কোনো কথা বেরোচ্ছে না মুখ দিয়ে। কি রে চুপ কেনো কথা দে আমাকে?আমার আগের অনিক কে ফিরিয়ে দিবি। খালামনির কথায় ঘুর কাটলো, কিন্তু খালামনি আমি কি করে পারবো, আমি তো তেমন কিছু জানিনা ওর ব্যাপারে ওর এই সময়ের বা ওর অতীত সম্পর্ক এ।আমি কি করে, খালামনি আমার মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলে,তাহলে শোণ ,, আজ থেকে ৩ বছর আগের ঘটনা,তখন অনিক অনার্স ২য় বর্ষে অধ্যয়ন করছিলো। ওর ক্লাসের একটা মেয়ের সাথে ওর ফ্রেন্ডশিপ হয়।মেয়েটা খুব সুন্দর ছিলো,যদিও ওরা বেষ্ট ফ্রেন্ড ছিলো তারপরও অদের মাঝে প্রেম ভালবাসার উদ্ভব ঘটে, আমি খুব মনোযোগ দিয়ে খালামনির কথা শুনছিলাম। তারপর কি হয়েছিলো খালামনি। অনিক ছিলো একটা ফাজিল টাইপের ছেলে,ওর চলাফেরার মাঝে তখনও দুষ্টামির চাপ ছিলো যা ক্লাসের আর ওরর ফ্রেন্ড সার্কেল কে মাতিয়ে রাখতো। অনিক খুব ফ্রেন্ডলি ছিলো আমার কাছ থেকে কিছু লুকাতো না।মেয়েটার প্রেনে পড়েছিলো আমি বুঝতেই পারছিলাম আমার ছেলেটা কারো প্রেমে হাবুডুবু খাচ্ছে। আমাকে সব কিছু বলতো,রোজ রোজ মেয়েটার এতো এতো গল্প শুনাতো আর আমি শুনতাম। অনিক ওকে প্রপোজ করেছিলো, আর সে ও তা খুব সহজেই গ্রহন করে নেয়,চলতে তাকে ওদের লাভ স্টোরি। একদিন গভীর রাতে অনিকের রুমে কান্নার আওয়াজ পাই,আমার বুকটা ধড়পড় করে উটে,হঠাৎ অনিক কাঁদছে দেখে সহ্য করতে পারিনি,যে ছেলেটা সারাদিন হৈ চৈ গান বাজনা আড্ডা দিয়ে ব্যস্ত থাকতো সেই ছেলেটার এরকম কান্না কারোরই সহ্য হবে না। কি হয়েছে বাবা কাঁদছিস কেনো,কেউ তকে বকেছে হুম কার এতো বড় সাহস আমার ছেলেটাকে কাঁদায়। আম্মু আম্মু ( কান্না কান্না গলায়) কি হয়েছে বল আমাকে। আম্মু নিধি।(নিধি বলেই আবার কান্না করে,নিধি ওই মেয়েটার নাম যাকে অনিক ভালবাসে) কি করেছে নিধি,ও কিছু বলছে তকে, আমায় বল আমি ওর সাথে কথা বলবো?? কোনো লাভ হবে না আম্মু (কেঁদে কেঁদে) কেনো কি হয়েছে আমায় সব বলতো। আম্মু কাল ওর বিয়ে,ও আমাকে আগে কিছু বলেনি কেনো?আমি এখন কি করবো আম্মু। ওর হবু বর কি করে? অনেক কোটিপতি বাবার ছেলে। হুম সে জন্যই তকে ছেড়ে যেতে চাইছে কারন ওর টাকা চাই সত্যিকারের ভালবাসা না। আম্মু আমি তো ওকে,(বলেই কান্নার বেগ আরোও বাড়িয়ে দিলো অনিক) তুই ওকে ভালবাসলেও ও তকে কখনওই ভালবাসেনি। আম্মু ও বলেছে আমি যেনো আর ওর সাথে যোগাযোগ না রাখি। আমি ওকে খুব ভালবাসি আম্মু ও কি সেটা একবারের জন্য হলেও বুঝতে পারেনি। ও হয়তো তকে বুঝতে চায় নি,তুই ওকে ভুলে যা,নতুনকরে আবার শুরু কর। কিন্তু না ওর অবস্তার উন্নতি হয়নি ও দিন দিন নানা রকম পাগলামি করতো, কখনও নেশা, বিড়ি সিগারেট এসব খেতো আর নিজেকে শেষ করতে চাইতো। কিন্তু খালামনি আজ এতো পরিবর্তন কি করে। হয়তো তকে দেখে,যেনো তোর কাছে ধরা পড়ে সেজন্যই আগের মতো বিহেভ করছে।বিশ্বাস কর আম্মু আমার ছেলেটা এরকম না ও খুব ভালো একটা ছেলে।আর আমি জানি তুই একমাত্র সেই মেয়ে যে আমার ছেলেটাকে আগের অনিকে ফিরিয়ে আনবি।কি রে বল পারবি। খালামনি আমাকে একটু সময় দাও,আমি চেষ্টা করব ওকে আগের মতো করতে, কিন্তু। কোনো কিন্তু নয় আম্মু তকে পারতেই হবে। আর আমার ইচ্ছা তুই আমার ছেলের বউ হয়ে এ বাড়ি তে আসবি। খালামনি(অবাক হয়ে) অবাক হওয়ার কিছু নাই আমি তোর আর অনিকের বিয়ের ব্যাপারে তোর আম্মু আব্বুর সাথে আলাপ করেছি। কিন্তু অনিক,ও আমাকে মেনে নিবে কেন? কারন তুই যে অনিক কে ভালবাসিস।তোর সেই ভালবাসার জোড় দিয়ে অনিক কে তোর করে নিতে পারবি না। খালামনি(লজ্জায় খালামনিকে জড়িয়ে ধরলাম) হয়েছে আম্মু আর লজ্জা পেতে হবে না। কিন্তু অনিক কোথায় গেলো? চিন্তা করিস না,বাইরে গেছে ফিরে আসবে।মন খারাপ হলেই নির্জন জায়গায় শান্তি খোঁজে ছেলেটা। খালামনি আমি কি রুমে যেতে পারি? হুম যা এতে পারমিশন নেয়ার কি আছে? হুম যাচ্ছি। অনিকের রুমে গিয়ে তো আমি পুরাই অবাক। চলবে........... গল্প = আমি শুধুই তোমাকে চেয়েছি

কোন মন্তব্য নেই: