রবিবার, ১২ মে, ২০১৯

ভালোবাসার পরীক্ষা

🔔 🔔ভালোবাসার পরীক্ষা!🔔🔔 সাথী অনিকের পিছন দিকে হুট করে এসে কথাগুলো বললো। অনিক চমকে গেল। অনিক কলেজ ক্যাম্পাসে বসে বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছিলো।। সাথীর কথা শোনে আড্ডা হঠাৎ করে থামিয়ে সবাই নীরব হয়ে গেল। সাথী বলতে থাকলো........ ---সত্যি তুইও নারে। কি বলবো তুই আমার ভালো বন্ধু কিন্তু তো আচার আচরণে না আমার কি বলবো যাস্ট ডিজগাস্টিং লাগেরে। তর এমন আচরণে আমার তোকে বন্ধু ভাবতেও ঘৃণা হচ্ছে। মনে হয় তুই আমার শত্রু। কথাগুলো এক নিঃশ্বাসে সাথী বলে অনিকের দিকে ঘৃণা ও প্রশ্নসূচক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকলো। অনিক মাথা নিচু করে রইলো। অনিকের মাথা নিচু করা দেখে সাথী বললো.... ---কি হলো বল? বলবি না তো? ওকে আমার সাথে চল। এখানে আমি কিছু বললেই তো তোর জনদরদী বন্ধুরা আমাকে অপমান করা শুরু করবে। যেমন গুরু তেমন শিষ্য। চল চল। হা হা। কথাগুলো বলে সাথী অনিকের বন্ধুদের দিকে বিদ্রূপ দৃষ্টিতে তাকিয়ে হাসতে লাগলো। অনিকের এক বন্ধু কিছু বলতে যাবে তখন অনিক থামিয়ে দিলো। সাথীর সাথে অনিক চলে আসলো। পার্কে এক বেঞ্চে অনিক ও সাথী বসে আছে। পার্কে অনিকের বিপরীত দিকে বসা এক জুটির দিকে অনিক অনেকটা ঈর্ষা দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাথী নীরবতা ভেঙ্গে বললো..... -- শোন অনিক আমি তোকে সত্যি খুব ভালো বন্ধু ভাবিরে। তুই এমন করলে খুব কষ্ট লাগে। আর এমন করবি না কেমন? বল করবি না? অনিক কিছু বলতে চেয়েও যেন থেমে গেল। মাথানিচু করে ফেললো। মাথা নিচু করারও একটি কারণ আছে অনিক সেটা জানে। মাথা নিচু না করলে যে চোখ থেকে গড়িয়ে পড়া অবাধ্য জলবিন্দুগুলো সাথী দেখে ফেলবে। সাথীকে সেটা বুঝতে দেওয়া যাবে না। কোনোভাবেই না। অনিকের চুপ থাকা দেখে সাথী আবার বললো… --- অনিক আমি জানি তুই আমাকে কষ্ট দিতে চাস না। পাগল একটা। এমন আর করবি না কেমন? --- হু। --- আবিরকে সরি বলিস। প্লীজ। বলবি তো? --- হু। --- শুধু হু আর হু। আমার উপরে রাগবি না কিন্তু। কখন সরি বলবি? কালকে বলবি। ঠিকাছে ? --- আচ্ছা। --- অনিক তর শরীর খারাপ? --- নাহ। চল উঠি। সন্ধ্যা হয়ে আসছে। কথাগুলো বলেই অনিক চোখ মুছে উঠে গেল। সাথীও উঠে গেল। পার্ক থেকে মেইন রোড এসে অনিক বললো..... --- কি করে যাবি? রিক্সা ধরে দিব? --- না চল হেঁটে যাই। হাঁটবি আমার সাথে? অনিক কিছু না বলে সাথীর দিকে এক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। সাথীর অস্বস্তিবোধ হলো। অনিকের উত্তর না পেয়ে সাথী আবার বললো.... -- কিরে এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন। আমাকে কি নতুন দেখছিস? সাথী উত্তরের অপেক্ষা না করে অনিককে টানতে টানতে নিয়ে গেল। অনিক এখনো সাথীর দিকে তাকিয়ে আছে। সাথীর দিকে একবার তাকালে যেন চোখ সরাতে ইচ্ছে করেনা। কি এক অজানা অচেনা ঘোরে আকৃষ্ট হয়ে যায় অনিক। হয়তো সেটা সাথী বুঝতে পারে আবার হয়তো বুঝতে পারে না। যদি বুঝতো তাহলে অনিকের সাথে এমনভাবে কথা বলতে পারতো কি! পারতো এতই নির্দয় হতে! এগুলো ভাবতে ভাবতে কি করে যেন চোখ থেকে কয়েক ফোঁটা জল গড়িয়ে পড়লো। যেহেতু সাথী অনিকের হাত ধরতে ধরতে যাচ্ছিল টপ করে অনিক হাতটা ছাড়িয়ে নিলো। কোনোভাবেই সাথীর হাতে জল পড়তে দেওয়া যাবে না। সমস্যা হবে। সাথী থেমে গিয়ে অবাক চোখে অনিকের দিকে তাকিয়ে থাকলো। অনিক ইতস্তত হয়ে বললো.... ---ইয়ে মানে কিছুটা অসস্তি লাগছে তাই। সাথী মৃদু হাসলো। তারপর সাথী বললো.... ---ওকে আমার বাসা তো এসেই গেছে। তুই বরং চলে যা। গিয়ে চটপট খেয়ে শুয়ে পড়। গিয়ে ফোন দিস কেমন? ---হু। অনিক সাথীর চলে যাওয়া দেখছে। কি সুন্দর করে নিঃশব্দে হাঁটতে পারে সাথী! কি স্বার্থপর একবার তাকিয়ে দেখেও না অনিক কি চলে গেছে নাকি এখনো দাঁড়িয়ে আছে। দেখবেই বা কেনো। দেখার মানুষ থাকলে অপ্রয়োজনীয় মানুষদের এতো দেখে কি হবে শুনি। সাথী একসময় দূরে মিলিয়ে গেল। আর দেখা যায়না। হয়তো এখনো কিছু কিছু দেখা যাবে, কিন্তু অনিক সেটা পারবে না। চোখের জলগুলো বড্ড বেহায়া। না করলেও চলে আসে। সাথীর চলে যাওয়াও দেখতে দিবে না। অনিক ঘুরে যায়। বাড়ির উদ্দ্যেশে হাঁটা দেয়। খুব একটা ঠাণ্ডা না পড়লেও অনিকের প্রচণ্ড ঠাণ্ডা লাগছে। ঘরে এসে শুয়ে শুয়ে অনিক ভাবছে, আবির কি এতই গুরুত্বপূর্ণ সাথীর কাছে! আমি কি কিছুই না সাথীর কাছে! ওকে সাথী যদি চায় তাহলে আবিরের পায়ে ধরবে অনিক। তবুও যেন সাথী হ্যাপী থাকে। লাইটটা নিভিয়ে অনিক শুয়ে পড়লো। সাথীকে ফোন দিয়ে পৌঁছার কথা বলতে ভুলেই গেল অনিক। "আচ্ছা গণিত ডিপার্টমেন্টটা কোনদিকে? " অনিক গণিত ডিপার্টমেন্টের নিচে বসে একটা বই উলট-পালট করছে। পাশে তার বন্ধুরা বসে একটা গানের সূর ধরার চেষ্টা করছে। একটা মেয়ে এসে গণিত ডিপার্টমেন্ট কই জানতে চাইলো। অনিক পাত্তা দিতো না। আজ তার ভীষণ মন খারাপ। আর মন খারাপ দেখে বন্ধুরা বিদ্রূপ করেই তাকে নিয়েই গান গাইছে। কিন্তু মেয়েটার বোকামি দেখে অনিক বিরক্তি নিয়ে তাকালো। চোখে কালো চশমা, পড়নে সাদা রংয়ের টি-শার্ট আর কালো জিন্স। এতোসব আধুনিকতা থাকা সত্ত্বেও বেশ মায়াবী চেহারার তো! মেয়েটির কথা শুনে সবাই হেসে উঠলো। সবার হাসি থামিয়ে অনিক মেয়েটার একদম সামনে গিয়ে বললো.... --- রূপে তে রূপসী । কিন্তু মাথাটা একেবারে বলদের মাথা। নাহলে গোলবারের কাছে এসে বল নিয়ে বলতেন না গোলবার কোথায় গোল দিব। আর বুঝবেনই বা কি করে চোখে অণুবীক্ষণযন্ত্র একখানা লাগানো আছে। এক কাজ করুন কল্লাটা একদম আসমানের দিকে তোলেন। দেখবেন এই ভবনের উপরে বাংলায় লেখা আছে গণিত ডিপার্টমেন্ট। হা হা হা। অনিক এই কথাগুলো বলেই উচ্চশব্দে হেসে উঠলো। সাথে তার বন্ধুরাও তার সাথে যোগ দিলো। অনিকের বান্ধবী রিক্তা গিটার রেখে বললো... --এই অনিক মেয়েটার দিকে একবার তাকা। ইশ মায়াবী মুখখানা কি রকম কালোবর্ণ ধারণ করলোরে। তুইও না! বলেই রিক্তা হেসে উঠলো। সবাই রিক্তার সাথে আরো উচ্চশব্দে হাসতে লাগলো। মেয়েটা সবার দিকে একবার ঘৃণাচোখে তাকালো তারপর অনিকের দিকে তাকিয়ে একটা গভীর নিঃশ্বাস ছাড়লো। অনিক হাসি থামিয়ে মেয়েটার চোখে চোখে তাকিয়ে মাথা নাড়লো। অনিক বুঝাতে চাইলো যে সে এসব কিছুই জানে না। ইন্নোসেন্ট বয়। তারপর মেয়েটা ভবনের দিকে উঠে চলে গেলো। অনিক ভাবতে লাগলো ,সবাই মিলে অনেক মজা নিলাম অথচ মেয়েটা একটুও কিছু বললো না। নাহ, মেয়েটা সম্ভবত বুঝতে পারেনাই ভবনটা কোথায়। কিন্তু আশ্চর্যজনকভাবে ভবনের নিচেই এসে গিয়েছিল। অনিক অনার্স দ্বিতীয় বর্ষে পড়ে। ক্লাশ শুরু হয়েছে। অনিক ক্লাশে মনযোগী না হয়ে মেয়েটার দিকে ঘন ঘন তাকাচ্ছে। মেয়েটা তাতে ভ্রুক্ষেপ করছে না। হয়তো বুঝতে পারছে না আবার হয়তোবা বুঝতে পারছে। রেগে আছে তাই তো তাকানোর প্রয়োজন মনে করছে না। মেয়েটা সম্ভবত এই কলেজে নতুন ভর্তি হয়েছে। আগে তো দেখেনি! মেয়েটার সাথে কি পরিচিত হবে? অনিক যা ব্যবহারটাই না করেছে মনে হয় না কথা বলবে। ক্লাশ শেষে সবাই বেরোচ্ছে। মেয়েটা তো বসে আছে। মেয়েটা কি বুঝতে পারছে না ক্লাশ শেষ হয়ে গেছে? সবাই বেরোচ্ছে দেখতে পারছে না? কি আজব গাধা রে বাবা! অনিক মেয়েটার পাশে গিয়ে বললো.... ---এই যে অণুবীক্ষণযন্ত্র ক্লাশ তো শেষ। নাকি গবেষণার জন্য আজকে কলেজে থাকবেন? দেখতে তো পারছি কী গবেষণা করছেন। দেশ একেবারে উদ্ধার করে ফেলছেন। ---হিহিহি।ওহ আসলে কি হয়েছে আমার না জুতাটা ছিঁড়ে গিয়েছে। তাই বসে আছি। কি করি বলুন তো? আশ্চর্য! মেয়েটার সাথে কেমন বিদ্রূপভঙ্গি নিয়ে কথা বললাম আর মেয়েটা সেসব কিছুর বিন্দুমাত্র প্রতিবাদ করলো না। উল্টো কেমন সহজ সরল স্বীকারোক্তি দিয়ে বললো জুতা ছিঁড়ে গেছে। খুব ভালো মনে হচ্ছে। এসব অনিক ভাবতে লাগলো। তারপর অনিক বললো..... ---আচ্ছা এক কাজ করুন আপনার জুতাজোড়া ব্যাগে ঢুকিয়ে নিন। আমিও আমার জুতাজোড়া ব্যাগে ঢুকিয়ে নিব। --- তাহলে কি হবে শুনি? ---খালি পায়ে হাঁটবো। ---বুঝলাম। কিন্তু আপনিও হাঁটবেন কেনো? ---আরে ইয়ার আপনি একা হাঁটবেন। কেমন দেখায় না? তাছাড়া একসাথে দুজন হাঁটলে মানুষ ভাববে আমরা ইচ্ছা করেই আবেগে হাঁটছি। হিমু ভাব নিচ্ছি। বুঝেন না? হাহহা। ---ওহ দারুণ তো! কিন্তু...। ---কি? ---কিছুনা চলেন। ---হুম। অনিক মেয়েটির পাশেপাশে হাঁটছে। এতো পাশে যেন বুঝা যাচ্ছে দুই ঘনিষ্ঠ বন্ধু। সবাই সামনে সামনে হেঁটে যাচ্ছে অনিক আর মেয়েটি সবার পিছু পিছু হাঁটছে। ---আচ্ছা অণুবীক্ষণযন্ত্র আপনি আমাদের কলেজে ট্রান্সফার হলেন কেন? অনিক নীরবতা ভেঙ্গে বললো। তারপর মেয়েটি বললো... ---আসলে এখানে আমার আন্টির বাসা।আর আমাদের বাসা সিলেট।আমার বাসায় থেকে পড়া হচ্ছে না।একটা সমস্যা আছে।তাই এখানে আসা। আর আমি অণুবীক্ষণযন্ত্র না আমার একটা কিউট নাম আছে। সাথী। ---বাহ বেশ সুন্দর দেখতে তো নামটা! ---হিহিহি। নাম আবার দেখা যায়? ---আমি দেখি। তো সাথী আপনি কি কলেজে আমার আর বন্ধুর ব্যবহারে খুব কষ্ট পাইছেন? কষ্ট পাইলে আপনি সরি বলেন। ---হা হা হা। আমি সরি বলবো? আপনি তো বেশ মজার। আর আমি সামান্য রেগে গিয়েছিলাম। তবে পরে আবার ভেবে দেখলাম দোষ তো আমিই করছি। আর আপনারা বন্ধু হিসেবে মজা করছেন। করতেই পারেন। ---বাহ বেশ বেশ। তাহলে ফ্রেন্ডস? ---ওকে। তবে একটা শর্ত আছে। ---বলুন। --- আমাকে নিয়ে মাঝেমধ্যে ফুঁচকা খেতে যেতে হবে। আর সুন্দর সুন্দর জায়গায় অবশ্যই বেড়াতে যেতে হবে। আর.... ----আর? ---আর কখনো বন্ধুর চেয়ে বেশি কিছু ভাবা চলবে না। বন্ধুত্ব নষ্ট হয় এমন কিছু করা যাবে না। কষ্ট পাবো। ---আচ্ছা বাবা আচ্ছা। এভাবে কথা বলতে বলতে সাথীর আন্টির বাসা পর্যন্ত হেঁটেই যায় অনিক ও সাথী। কলেজ থেকে খুব একটা বেশী দূরে নয়। সাথীর কাছ থেকে সেদিনের মতো বিদায় নেয় অনিক। ধীরে ধীরে খুব ঘনিষ্ঠ হয়ে যায় অনিক আর সাথী। এতোই ঘনিষ্ঠ যে কেউ কাউকে ছাড়া কিছু বুঝে না। সেই সকালের গুড মর্নিং বলে শুরু হয় এবং রাতের গুড নাইটে শেষে হয় কথা। ক্লাস শেষে নিয়মিত ফুচকা খাওয়া মাঝেমধ্যে ঘুরতে যাওয়া। অনিক সাথীকে তার জীবনের একটা অংশ ভাবতে শুরু করে। সাথী অনিককে খুব ভালো বন্ধু ভাবে কিন্তু অনিক সাথীকে বন্ধুর চেয়েও বেশি কিছু ভাবে। অনিক মাঝেমাঝে ভাবে সাথী কি তাকে অতোটা আপন ভাবে? "অনিক শোন এই হচ্ছে আবির। আমার বড় আন্টির ছেলে। আর আবির এই হচ্ছে আমার কলেজর একমাত্র ভালো বন্ধু। অনিক দেখতো আবির আর আমাকে কেমন মানিয়েছে ?" বেশ কিছুদিন এভাবে কেটে গেল। একদিন কলেজ নেই তাই সাথী বলেছিল বেড়াতে যাবে আর একটা সারপ্রাইজ দিবে । আর সাথী অনিকের কাছে এসে একথাগুলো বললো। অনিক মনে মনে ভাবছে "ওহ, এটা তাহলে সাথীর সারপ্রাইজ! কাজিন বলছে সমস্যা না। কিন্তু কেমন মানিয়েছে সেটা বললো কেন! তাহলে কি সাথীর সাথে কিছু আছে আবিরের! সেদিন আবিরের সাথে পরিচিত হয়ে চলে আসলো অনিক। বেশিক্ষণ থাকেনি। তারপর থেকে অনিক যেন চেঞ্জ হয়ে যেতে থাকলো। ঠিকমতো সাথীর সাথে কথা বলতো না। এমনকি কথায় কথায় সাথীর সাথে ইচ্ছে করেই ঝগড়া করতো। যখন অনিক সাথীকে অযথা গালি দিতো তখন সাথী চুপ হয়ে যেতো। মাথা নিচু করে চোখের জল ফেলতো। এক দুই দিন কথা বলতো না সাথী। তারপর সাথী নিজ থেকে এসে অনিককে অভিমানী কণ্ঠে বকাঝকা করতো, অনিককে কান ধরাতো। তারপর আবার ভালো বন্ধুত্ব চলতো। ধীরেধীরে অনিক বুঝতে পারলো যে আর সম্ভব নয়। এতো স্বার্থপর হলে চলবে না। সাথীর হাসিতেই তার হাসি হওয়া উচিৎ। কিন্তু আবিরের কিছু কিছু প্রশ্নবিদ্ধ কার্যকলাপ অনিকের ধৈর্যহীন করতে বাধ্য করে। আবিরের সাথে অনিকের এই নিয়ে দুইবার ঝগড়া হয়। প্রথমবার ঝগড়া হয় যখন তখন তিনজন বেড়াতে গিয়েছিল। বেড়ানোর এক পর্যায়ে আবির সাথীর বারণ করা সত্ত্বেও জোরাজোরি করে কিস করতে চাইলো অনিক সেটা কিছুক্ষণ চুপচাপ দেখে ধৈর্যহারা হয়ে আবিরের গালে চড় বসিয়ে দেয়। তখন প্রায় আবির আর অনিকের প্রচুর কথা কাটাকাটি হয়ে যায়। সাথী অনিককে দুটা চড় মেরে সাবধান করে দেয় ভবিষ্যতে যেন আবিরের সামনে নিজের খারাপ স্ট্যাটাস টা না দেখায়। তখন অনিক একদম চুপ হয়ে যায়। আবিরের কাছে ক্ষমা চেয়ে চলে আসে। এই ঘটনার পরেও অনিক সাথীর সাথে কথা বলা বাদ দেয়নি কিংবা সাথীর উপর রাগ দেখায় নি। আবির প্রসঙ্গ উঠলে অনিক অন্যমনষ্ক হয়ে বিষয়টা এড়িয়ে যেতো। বুঝতে দিতো তাদের বন্ধুত্বে আবির কোনো সমস্যা না। কিন্তু অনিক আশ্চর্য হয়ে খেয়াল করতো অনিক আবির টপিক যতোই এড়িয়ে চলতো সাথী ঘুরিয়ে ফিরিয়ে সেই টপিকটাই আনতো। আবিরের গুণগান করতো। অনিককে বার বার দোষারোপ করতো । অনিক বিরক্ত হতো কিন্তু সেটা বুঝতে দিতো না। আর দ্বিতীয়বার ঝগড়া হয়.......অনিক তার প্রিয় পার্কটায় বসে হেডফোন লাগিয়ে গান শুনছিল আর গল্প বই একটা পড়ছিল। হঠাৎ করে য়াল করে দেখলো পার্কের একপাশে আবির একটা মেয়ের হাতে হাত রেখে হাসাহাসি করছিল। মাঝেমধ্যে জড়িয়ে ধরার ব্যর্থ চেষ্টা রছে।অথচ এভাবে সাথীর সাথে থাকার কথা। অনিক আবিরের সামনে গিয়ে আবিরের শার্টের কলার ধরে বললো...." ভবিষ্যতে যেন এমন ভুল না হয়।সাথীর চোখে জল দেখলে আমি তোকে খুন করে ফেলবো।" আবির কিছু বলতে যাবে অনিক আঙ্গুল দিয়ে চুপ থাকার কথা বলে চলে আসলো। অনিক ঘুম থেকে উঠে ভাবতে লাগলো তার মন খারাপ কেনো। মন খারাপ থাকার কারণ ভাবতে ভাবতে মনে পড়লো সাথী তাকে আজ বলেছিল আবিরকে সরি বলতে। অনিক সাথীকে ফোন দিয়ে অনিকের প্রিয় পার্কটায় আবিরকে নিয়ে যেতে বললো। আজ সাথীকে কিছু বলতে হবে। অবশ্য আবির একটা মেয়ের সাথে পার্কে কি করছিল না করছিল তা বলার দরকার নেই। সাথী জীবনেও বিশ্বাস করবে না অনিককে। পার্কে তিনজন কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করতে লাগলো। অনিক নীরবতা ভেঙ্গে আবিরকে বললো... ----আবির ভাই আই এম সরি। আসলে আমি নিজেকে কন্ট্রোল করতে পারিনি। তাই আপনার সাথে খারাপ ব্যবহার করে ফেলেছি। আমাকে ক্ষমা করে দিয়েন। ভবিষ্যতে এমন আর হবে না আশা করি। তারপর অনিক সাথীর উদ্দেশ্যে বললো.... ---সাথী, সত্যি রে এবার ফাইনাল সরি বলছি। আর আমি কিন্তু তোদের বিয়েতে থাকবো না। যদি আবার সমস্যার সৃষ্টি করি। আমাকে দিয়ে....। সাথী অনিকের ঠোটে হাত দিয়ে ঢেকে অনিকের কথা থামিয়ে দিলো তারপর বললো.... ---আমি অন্যের বউ হয়ে যাব। কষ্ট হবে না? পারবি ছেড়ে থাকতে? ---পারবো। খুব পারবো। তুই তো আমার বন্ধু। তোর আনন্দে আমার আনন্দ। অনিকের কথা শুনে আবির ও সাথী অবাক চোখে অনিকের দিকে তাকালো। অনিক আবিরের সামনে গিয়ে বললো.... ---দেখছেন আবির ভাই সাথী কি বলে! পাগলী একটা। বিয়ে করেন তাড়াতাড়ি। খুব ভালো বউ কিন্তু। ---রাখেন আপনার বউ। সাথী অন্য একটা ছেলেকে অনেক আগে থেকে ভালোবাসেরে ভাই। শুনেছি ছেলেটা খুব বোকা। সাথীকে বুঝে না। ছেলেটা তার ভালোবাসার মানুষটার সুখের কথা চিন্তা করে নিজের ভালোবাসাকে কোরবানি দিয়ে দেয়।এখন বলেন আমাকে বিয়ে করবে কিনা ওই ছেলেকে করবে। ---সাথী, আবির ভাই থাকা সত্ত্বেও আবার কাকে ভালোবাসিস? ---তোকে। সমস্যা? ---আমাকে! কি বলছিস এসব। মজা করিস না প্লীজ। সত্যিটা বল না? ---বললাম তো। বিয়া করবি আমাকে? অনিক অনেকটা অবাক আশ্চর্য চোখে সাথীর দিকে তাকায়। আবির বলে.... --- আরে মিয়া আমরা দুইজন আপনাকে অনেকভাবে পরীক্ষা করেছিলাম। আপনি কি সত্যি সাথীকে ভালোবাসেন কিনা। হ্যাঁ, আমরা আপনাকে বুঝে ফেলেছি আপনি সাথীকে ভালোবাসেন। কিন্তু আপনি খুব শক্ত মানুষ। প্রকাশ করবেনই না। বেষ্ট অফ লাক। ইনজয় ইয়াং ম্যান। এই বলে আবির চলে যেতে লাগলো। সাথীর চোখ থেকে জল গড়িয়ে নীচে পড়ছে। অনিক সাথীর চোখ মুছে দিয়ে বললো.... ---তুই আবিরকে নিয়ে এমন আচরণ করা শুরু করলি আমার বুঝতে কষ্ট হচ্ছিলো তুই আমার প্রতি দুর্বল কি না। ---নো আবির। জাস্ট আমি আর তুমি। বললে না তো। বউ করবে কিনা? ---করবো। করবো। অবশ্যই। অনিকের চোখ দিয়ে আজ যেন জল পড়তে চাইছে না। খুব কষ্ট করে জল যেন বেরিয়ে আসছে। হয়তোবা আনন্দে আসতে চাইছে না। অনিক সাথীকে খুব শক্ত করে জড়িয়ে ধরলো। অনেক কষ্ট, অনেক না বলা কথা জমে আছে। সাথীকে সব বলতে হবে। আর! আর সাথীর কাছ থেকে অনেক ভালোবাসা পেতে হবে। অনিক সাথীর ভালোবাসা পাবার জন্য যে বড্ড পিপাসু! written by:::Asad