অদ্ভুত
প্রেমের গল্প
আহাদের গল্প
লিখেছে : Amicable Ahad
এক...
মেয়েটা কে?
আহাদ সুপ্তিকে নিয়ে একটু শপিং এ যা।
কাল যখন বাসা থেকে বের হব তখনি আম্মা কথাটি বললো।
আমার মুখের বিরক্তি ভাবটা আবার ফুটে উঠল।কোন কালেই শপিং আমার ভাল লাগে না তার উপর আবার মেয়ে।
চলো আমি রেডি। কথাটি শুনে পেছনের দিকে তাকালাম।
দেখি সুপ্তি দারিয়ে আছে।কি মেয়েরে বাবা বলার আগেই রেডি।
আমি কিছু বলার আগেই আম্মা হাতে টাকা দিয়ে বলল শপিং এর পরে একটু ঘুরতে নিয়ে যাস মেয়েটাকে।
সারাদিন বাসায় কি ভাল লাগে।
আমার রাগের মাত্রাটা আরও একটু বেড়ে গেলো।শপিং পর্যন্ত ঠিক ছিলো আবার ঘুরতে যাওয়ার কি দরকার।
আমি কিছু না বলে সুপ্তিকে নিয়ে বেড়িয়ে পড়লাম।
সুপ্তি আমার দুরসম্পর্কের মামাতো বোন।কিছুদিন হলো বেড়াতে এসেছে।কিন্তু অনেক বলার পরও আমি বেড়াতে নিয়ে যাই নি।
দেখতে ভয়ংকর সুন্দর।কিন্তু আমার এই সুন্দর এর মায়ায় পড়া যাবে না।
সুপ্তি আসার পর থেকে আমি বাসায় খুব কম ই থাকি।ওকে এড়িয়ে চলার চেষ্টা করি।
মেয়েটাযে আমাকে এখনও ভালবাসে এইটা আমি ঠিকই বুঝতে পাড়ি।
দুই...
আমি তোমাকে ভালবাসি আহাদ।
কথাটি শুনে পেছনে তাকিয়ে দেখি সুপ্তি দারিয়ে আছে।
বাসায় আসার সাথে সাথেই আম্মা বললো রেডি হয়ে নে তোর মামার বাসায় যাবো।
আমি যখনি না করতে যাবো তখনি আম্মা আবার বলে উঠলো এবার না করে লাভ নেই।যেতে না চাইলে জোর করে নিয়ে যাবো।আমি কিছু বললাম না।এবার আমাকে জেতেই হবে কেননা আম্মা আমাকে ছাড়া যাবে না।
কলিংবেল চাপ দিতেই সুপ্তি দরজা খুলে দিলো।আম্মার পাশে আমাকে দেখে মনে হয় ভুত দেখার মত চমকে উঠলো।
যে ছেলেটাকে এতদিন নানা ভাবে বুঝিয়েও মামার বাসায় নিয়ে আসতে পারে নি সে ছেলে আজ যদি মামার বাসায় যায় তাহলে একটু চমকাবার ই কথা।
মামা মামির সাথে কথা বলে একটু ছাদে হাওয়া খেতে উঠলাম।
কিছুদিন এভাবেই কেটে গেলো।সুপ্তিকে প্রায়ই আমি এড়িয়ে চলতাম।মেয়েটার মতি গতি ভাল মনে হচ্ছে না।
সবসময় আমার আশেপাশেই থাকে।এতদিন ভাইয়া বলতো কিন্তু এখন দেখি নাম ধরেই বলে।আমার সাথে এমন ব্যাবহার করে মনে হয় আমি ওর থাক বললাম না।
তিন...
অনিচ্ছা সত্ত্বেও সুপ্তিকে নিয়ে রিক্সায় উঠলাম।
এই পড়ে যাবে তো কথাটি শুনেই সুপ্তির দিকে তাকালাম।
দেখি ফাজিল মেয়েটা হাসতেছে।
এমন ভাবে আমার দিকে চেপে বসেছে যে আমি যদি আর একটু সরে বসি তাহলে পড়ে যাবো।
হঠাৎ করেই সুপ্তি আমার হাত ধরে ফেলনো।আমি কিছু বলতে জাবো তার আগেই সুপ্তি বললো একটু ধরে রাখি প্লিজ না কোরো না।
সুপ্তির মলিন মুখ দেখে আমি আর না করতে পারলাম না।ধরতেই তো চেয়েছে সমস্যা কি।
দেখ তো এইটা কেমন।
সুপ্তির কথায় পেছনে ঘুরে দেখি হাতে একটা কালো শাড়ি নিয়ে দারিয়ে আছে।
সুপ্তি আবারও বললো তোমার কালো রঙ পছন্দ তাই আমি এটাই নেব।
আমি ভ্রু কুচকিয়ে সুপ্তির দিকে তাকালাম।
আমার যে কালো রঙ পছন্দ এইটা এই মেয়ে কিভাবে জানে।
সুপ্তি মিষ্টি হাসি দিয়ে শাড়িটা প্যাক করে দিতে বললো।
বিল মিটিয়ে যখনি বের হব তখনি দেখি লাবন্য আমার সামনে এসে দাঁড়ালো।
লাবন্য আমার প্রাক্তন গার্লফ্রেন্ড। খুব তুচ্ছ কারনে ও আমার সাথে ব্রেকয়াপ করে চলে গিয়েছিলো।
সেদিন যখন ক্লাস শেষে তিথির সাথে বাসায় আসছিলাম তখন লাবন্য আমাদের একসাথে দেখে ফেলেছিল।
আমি সেদিন লাবন্যকে অনেক বুঝিয়েছিলাম যে তিথি আমার ফ্রেন্ড ছিল।কিন্তু সেদিন সে আমার কথা না শুনে আমার দুই গাল লাল করে দিয়ে চলে গিয়েছিল।
আজ যখন আবার লাবন্যর সাথে দেখা হলো তখনি লাবন্য উপরের কথাটি বললো।
চার...
আজ যখন ছাদে দারিয়ে আকাশ দেখছিলাম তখনি সুপ্তি কথাটি বললো।
আমি একটু অবাক হয়েই বললাম কি বললে?
আমি তোমাকে ভালোবাসি কথাটি বলে সুপ্তি আমার দিকে এক মায়াময় চেহারায় তাকালো।
আমি এক ভুল দ্বিতীয় বার আর করতে চাই না।লাবন্যও আমাকে অনেক ভালবাসতো।কিন্তু বিশ্বাস করতে পারে নাই।
মেয়েরা অতি সহজে সম্পর্ক গড়তে ও পারে আবার ভাংতেও পাড়ে।
আমি যথেষ্ট কঠিন ভাব রেখে অনেক কিছুই বলে সুপ্তিকে ফিরিয়ে দিলাম।
তার পরের দিন ই আমি সুপ্তিদের বাসা থেকে চলে আসি।শুধু শুধু মায়া বাড়ানোর কি দরকার।
আসার সময় সুপ্তির চোখে আমি পানি দেখেছিলাম।
তবুও আমার একটা কথাই মনে হয়েছে সব মেয়েই একই রকম।
চার....
লাবন্য আবারও বললো মেয়েটা কে?
আমি জখনি কঠিন গলায় কিছু বলতে যাব তার আগেই সুপ্তি পেছন থেকে বলে উঠলো আমি ওর স্ত্রী।
সুপ্তির কথা শুনে আমি একটু অবাক হলাম।একটু না বেশ ভালোই অবাক হলাম।মেয়েটা বলে কি, মাথা ঠিক আছে তো।
লাবন্যর মুখটা মলিন হয়ে গেলো।তো বিয়ের কতদিন হোলো কথাটি বলেই লাবন্য আমার দিকে তাকালো।
মনে মনে বললাম বিয়েই তো হলো না আবার কতদিন।
সাত দিন,,,, কথাটি বলেই সুপ্তি আমার দিকে তাকিয়ে মিষ্টি হাসি দিয়ে হাতের ভিতর হাত দিয়ে জরিয়ে রাখলো।
লাবন্যর মুখটা আরও একটু মলিন হয়ে গেলো।
আহ কি হাসি মনে হয় সারাজিবন এই হাসি দেখেই পাড় করে দিতে পারবো।মেয়েটার হাসির প্রেমে পড়ে গেলাম।
এই কি আবোল তাবল ভাবছি আমি।
আমি কিছু বলার আগেই টাকলা ভুঁড়িওয়ালা একজন লাবন্যকে ডাক দিল।
লাবন্য কিছু না বলেই চলে গেলো।তবে দূর থেকে বুঝতে বাকি রইল না যে এটাই লাবন্যর স্বামী।
এটাই লাবন্য কথাটি শুনে আমি সুপ্তির দিকে তাকালাম।
এই মেয়েটা কিভাবে জানলো এটা লাবন্য ছিল।আমি তো কোনদিন ওকে বলিনি।
লাবন্যর কথা শুধু আম্মা জানতো।
সুপ্তি আবারও বললো আমি কিভাবে জানি এটাই তো ভাবতেছ।
আম্মা বলেছে।আমি তোমার সবকিছু জেনেই তোমাকে ভালবেসেছি কথাটি বলেই সুপ্তি আমার হাতটা আরও শক্ত করে ধরলো।
পাচ.....
কাল মেয়েটাকে বেড়াতে নিয়ে যাবি।
বাসায় আসার পর ফ্রেশ হয়ে যখনি বসতে যাবো তখনি আম্মা কথাটা বললো।
কথাটি শুনে আমার কেমন যেন রাগ হল না।আমি কিছু না বলেই রুমে চলে গেলাম।
এই উঠো। ঘুম ঘুম চোখে তাকিয়ে দেখি সুপ্তি চা হাতে দারিয়ে আছে।
মেয়েটাকে কালো শাড়িতে দারুন মানিয়েছে।একদম বউ বউ লাগছে।
আজ কিন্তু ঘুরতে নিয়ে যেতে হবে কথাটি বলেই সুপ্তি আমার দিকে চায়ের কাপ টা এগিয়ে দিলো।
আমি একটু হেসে মাথা নাড়িয়ে সম্মতি দিলাম।
আমি মনে হয় এই ফাজিল মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম।কি মিষ্টি দেখতে।মনটাও অনেক ভাললো।
তুই কি আমাকে একটুও ভালবাসিস না কথাটি শুনে আমি আম্মার দিকে তাকালাম।
নাস্তা করার জননে যখনি চেয়ার টেনে বসতে যাবো তখনি আম্মা কথাটি বললো।
আম্মা আবারো বললো যে চলে গেছে তার জননে নিজেকে কষ্ট দেওয়া বোকামি ছাড়া আর কিছুই না।
মেয়েটা কিন্তু তোকে অনেক ভালবাসে। নাস্তা করে যখনি উঠতে যাবো তখনি আম্মা কথাটি বলে উঠলো।
কিছুই বুঝলাম না।কোন মেয়ে কার মেয়ে।
আম্মার দিকে তাকিয়ে দেখি সে সুপ্তির দিকে তাকিয়ে আছে।
আমি কিছু না বলে রুমে চলে আসলাম।
পরিশিষ্ট......
চলো।
কথাটি শুনে পেছনের দিকে তাকালাম দেখি সুপ্তি সকালের পড়া সেই কালো শাড়িটাই পড়ে আছে।তবে এখন হালকা মেকাপএ মেয়েটাকে দারুন লাগছে।
হাতটা একটু ধরি কথাটি বলেই সুপ্তি আমার দিকে তাকালো।
আমি কিছু বললাম না।সুপ্তি মুখটা গোমরা করে বসে রইলো।
রিক্সায় বসে আছি।তবে আজ সুপ্তির দিকে একটু চেপেই বসেছি।
রিক্সা এসে থামলো একটা পার্ক এর সামনে।
এখানে সব কাপলরা আসে।এখানে সিঙ্গেলদের কোন জায়গা নেই।
কিন্তু সুপ্তি যখন আসতে চাইলো তখন আর না করতে পারিনি।
একটা ব্রেঞ্চে গিয়ে বসলাম।সুপ্তিকে অনেক খুশি খুশি লাগছে।
কিছুক্ষন এদিকওদিক তাকিয়ে যখনি সুপ্তির দিকে তাকালাম দেখি মেয়েটি মলিন মুখে বসে আছ।
মন খারাপ কেনো।
সুপ্তি কোন কথা না বলে হাত দিয়ে ইশারা করে কিছু দেখাতে চাইল।
আমিও সে দিকে তাকিয়ে দেখি একটা কাপল বসে আছে।মেয়েটা ছেলেটার হাত ধরে কাধে মাথা রেখে বসে আছে।
তুমি চাইলে ওইভাবে বসতে পারো কথাটি শুনে সুপ্তি আমার দিকে অবাক চোখে তাকালো।
এই খানে অবাক হওয়ার কি আছে বুঝি না।
আমি এই হাত সাড়াজিবনের জননে ধরতে চাই কথাটি বলে সুপ্তি আমার দিকে তাকালো।
সুপ্তির চোখে আমি ভালবাসার চিহ্ন দেখতে পেলাম।এই চোখে কোন ছলনা নেই।কোন ছলনা থাকতে পাড়ে না।
আমি সুপ্তির হাত ধরতেই মেয়েটার চোখ থেকে টুপ করে পানি গড়িয়ে পড়লো।
আজ আম্মাকে সারপ্রাইজ দিতে চাই।
আমি আর সুপ্তি রিক্সায় বসে আছি। সুপ্তি আমার হাত জরিয়ে ধরে কাধে মাথা রেখে বসে আছে।
রিক্সা চলছে।গন্তব্য কাজি অফিস।
আমি সুপ্তির কপালে একটা চুমু একে দিলাম আর মনে মনে বললাম এই ভালবাসা হারাতে নেই।
(অবশেষে ফাজিল মেয়েটার প্রেমে পড়ে গেলাম)
বৃহস্পতিবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৯
অদ্ভুত প্রেমের গল্প আহাদের গল্প
Tags
# ভালোবাসা গল্প
About শেষ গল্পের সেই ছেলেটি
ভালোবাসা গল্প
Tags
ভালোবাসা গল্প
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
কোন মন্তব্য নেই:
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন