শনিবার, ৯ মার্চ, ২০১৯

বাস্তবতা

এক গলি রাস্তার মোড় দিয়ে যাওয়ার
সময় হঠাৎ করে তাকিয়ে দেখি
ইলেকট্রিক পোষ্টের সাথে একটি
কাগজ ঝুলছে।
উৎসাহ নিয়ে সামনে এগিয়ে দেখি
কাগজের গায়ে লেখা,
''আমার ৫০ টাকার একটা নোট এখানে
হারিয়ে গেছে। আপনারা যদি কেউ
খুঁজে পান তবে আমাকে সেটি পৌছে
দিলে বাধিত হব, আমি বয়স্ক মহিলা
চোখে খুব কম দেখি"।
তারপরে নিচে একটি ঠিকানা ।
আমি এরপর খুঁজে খুঁজে ঐ ঠিকানায়
গেলাম।
হাঁটা পথে মিনিট পাঁচেক।
গিয়ে দেখি একটি জরাজীর্ণ বাড়ির
উঠোনে এক বয়স্ক বিধবা মহিলা বসে
আছেন।
আমার পায়ের আওয়াজ পেয়ে
জিজ্ঞাসা করলেন "কে এসেছ?"
আমি বললাম, "মা, আমি রাস্তায়
আপনার ৫০ টাকা খুঁজে পেয়েছি আর
তাই সেটা ফেরত দিতে এসেছি।"
এটা শুনে মহিলা ঝরঝর করে কেঁদে
দিয়ে বললেন, 'বাবা, এই পর্যন্ত অন্তত
৩০-৪০ জন আমার কাছে এসেছে এবং
৫০ টাকা করে দিয়ে বলেছে যে তারা
এটি রাস্তায় খুঁজে পেয়েছে।
বাবা, আমি কোন টাকা হারাই নাই, ঐ
লেখাগুলোও লিখিনি।
আমি খুব একটা পড়ালেখা জানিও না।
আমি বললাম, সে যাইহোক সন্তান মনে
করে আপনি টাকাটা রেখে দিন।
আমার কথা শোনার পর টাকাটা নিয়ে
বললেন 'বাবা আমি খুব গরীব কি যে
তোমায় খেতে দি! একটু বসো। একটু জল
অন্তত খাও।
'বলে ঘরে গিয়ে এক গ্লাস জল নিয়ে
এলেন।
ফেরার সময় তিনি বললেন, "'বাবা,
একটা অনুরোধ তুমি যাওয়ার সময় ঐ
কাগজটা ছিঁড়ে ফেলো সত্যি আমি
লিখিনি।"
আমি ওনার বাড়ি থেকে বের হওয়ার
সময় মনে মনে ভাবছিলাম, সবাইকে
উনি বলার পরেও কেউ ঐ কাগজটি
ছেড়েনি!!
আর ভাবছিলাম ঐ মানুষটির কথা যিনি
ঐ নোটটি লিখেছেন।
ঐ সহায়সম্বলহীন বয়স্ক মানুষটাকে
সাহায্য করার জন্য এত সুন্দর উপায়
বের করার জন্য তাকে মনে মনে
ধন্যবাদ দিচ্ছিলাম।
হঠাৎ ভাবনায় ছেদ পড়লো একজনের
কথায়।
তিনি এসে বললেন, 'ভাই, এই
ঠিকানাটা কোথায় বলতে পারেন,
আমি একটি ৫০ টাকার নোট পেয়েছি ,
এটা ওনাকে ফেরত দিতে চাই।'
ঠিকানাটা দেখিয়ে দিয়ে হঠাৎ করে
দেখি চোখে জল চলে আসল, আর
আকাশের দিকে তাকিয়ে বিড়বিড়
করে বললাম, দুনিয়া থেকে মানবতা
শেষ হয়ে যায়নি!!...

কোন মন্তব্য নেই: